পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন হয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও বান্দরবানের লামা উপজেলার সাবেক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে মহা-সাংগ্রাই মেলা। পহেলা বৈশাখের প্রাণবন্ত আবহে এই মেলা পাহাড়ি মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবের সঙ্গে বাঙালির নববর্ষের মিলন ঘটিয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে মহাঐক্যের মেলা হিসেবে পরিচিত ।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন এলাকায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাঈন উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহামুনি বৌদ্ধ বিহারটি শতবর্ষের পুরনো এবং এখানে বার্মা থেকে আনা বিশাল বুদ্ধমূর্তি স্থাপিত আছে, যা স্থানীয়দের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু । আগে এই মেলা “সাংগ্রাই” নামে পরিচিত ছিল, যা মারমা সম্প্রদায়ের নববর্ষ উৎসব। কালের পরিক্রমায় এটি বৈশাখী মেলায় রূপ নিয়েছে এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে সার্বজনীন রূপ পেয়েছে ।
আরও জানা যায়, মারমা যুবক-যুবতীদের ঐতিহ্যবাহী ঢোল, কাঁসা, বাঁশির তালে নাচ ও গান। পাহাড়ি পোশাকে মাথায় ফুল ও রঙিন পাগড়ি নিয়ে শোভাযাত্রা । বিহারে বুদ্ধমূর্তির পূজা, মোমবাতি প্রজ্বালন, এবং ডোনেশন বক্সে দান। অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বুদ্ধ মূর্তিকে স্নান করানোর রীতি । মেলার শেষ দিনে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র পানি খেলার আয়োজন, যা উৎসবকে করে তোলে রোমাঞ্চকর ।
উদ্বোধনের সময় ইউএনও মাঈন উদ্দিন বলেন, এই মেলা শুধু বিনোদন নয়, বরং পার্বত্য অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত উদাহরণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লামা পৌরসভার সাবেক মেয়র আমির হোসেন আমু, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
লামার এই মেলা কেবল একটি উৎসবই নয়, বরং বহুসংস্কৃতির সহাবস্থানের মডেল। এটি পাহাড়ি-বাঙালির ঐক্যকে শাণিত করে এবং জাতীয় সংস্কৃতিতে যোগ করে অনন্য মাত্রা। আগামী দিনগুলোতে এই মেলাকে আরও ব্যাপকভাবে প্রচার করার দাবি স্থানীয়দের।