পহেলা বৈশাখ হচ্ছে লোকজের সঙ্গে নাগরিক জীবনের একটি সেতুবন্ধ। ব্যস্ত নগর কিংবা গ্রামীণ জীবন যেটাই বলা হোক না কেন, এই নববর্ষই বাঙালি জাতিকের নাগরিকরে অতেীয়তাবোধে। এ অনুষ্ঠান পরিণত হয় প্রত্যেকটি বাঙালির কাছে শিকড়ের মিলনমেলায়। ধর্ম, বর্ণ সব পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে বাঙালি জাতি এই নববর্ষকে সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। বছরের প্রথম দিনটি বাঙালিরই শুধু নয়, বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী ও নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন-জগতে স্বপ্নময় নতুন বছরের শুভ সূচনা ঘটায়। জীর্ণ-পুরোনোকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করে বাঙালি জাতি।
পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে থাকত পুরো জাতি। পহেলা বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরাসহ দেশ-বিদেশে বসবাসরত প্রত্যেকটি বাঙালি নববর্ষ হিসেবে পালন করে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন প্রাণের উৎসব। বাঙালি এই প্রাণের উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে আবহমান বাংলার কৃষি। গ্রামীণ মেলাগুলো পরিণত হয় উৎসবে। এই উৎসবের রং একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়েছে বারবার। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির
অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
আমাদের দেশে অনেকে পহেলা বৈশাখে নববর্ষের উন্মাদনায় বাউল বা বৈরাগীর বেশ ধারণ করে। কিন্তু যাদের কারণে, যাদের শ্রমে, যাদের মেহনতে, যাদের ঘামে, যারা রোদে-পুড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে, ঝড়ের সঙ্গে মাঠে লড়ে, ঝড়ঝাপটা, বন্যা-খরা-দুর্যোগ সামাল দিয়ে মাঠে ফসল ফলায়; সেসব খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের খবর আমরা কজনে জানি বা রাখি। যারা দেশ জাতি ও সমাজের মানুষের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগান দেন, তারা আমাদের কৃষক জনগোষ্ঠী। বাংলা নববর্ষের এই লগ্নে একবারও কি ভাবা যায় না, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষকরা কেমন আছেন? উৎপাদন ব্যয় কতটুকু বেড়েছে? তবে এটা ঠিক বাংলা নববর্ষের ভেতর দিয়ে মূলত দেশের আপামর জনসাধারণ নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে লালন করে চলেছে। পহেলা বৈশাখের উৎসবের মধ্য দিয়ে এ দেশের নর-নারী এ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। নতুবা আমাদের নতুন প্রজন্ম বাংলার ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতির কিংবা বাংলা ঋতুর কথা ভুলেই যেত। দেশ ও জাতির মঙ্গলে জনগণের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। বাংলা নববর্ষে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২বঙ্গাব্দ