গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুটি রেঞ্জের আওতাধীন বিট গুলোতে থামছেই না বনের জমি জবরদখল। এ দুটি রেঞ্জের আওতাধীন বিট গুলোতে দালালদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত জবরদখল হচ্ছে বনবিভাগের মূল্যবান সরকারি জমি। মাঝে মধ্যে ডাকঢোল পিটিয়ে দু-একটি বড় অভিযান করলেও রেঞ্জ ও বিট অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজস ও দালালদের তৎপড়তার কারনে বনের জমি জবর দখল কোন ভাবেই যেন থামছে না।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র/জনতার আন্দোলনের তুপের মুখে সাবেক প্রধান মন্ত্রী দেশত্যাগ করলে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৫ আগষ্ট সারাদেশে বিজয় মিছিল করে ছাত্র/জনতা, বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীরা। এমন একটি মিছিল নিয়ে ওইদিন বিকেল ৩টায় কালিয়াকৈর চন্দ্রা রেঞ্জ ও বিট অফিসে ঢুকে ভাংচুর চালায় এবং ওই অফিসের অস্ত্র ও গুলি লোট করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে দুটি রেঞ্জের আওতাধীন বিট অফিসের লোকজন আতœগোপনে চলে যায়। তারপর থেকে বনের জমি জবরদখলের হিড়িক পড়ে যায়। গত কয়েক মাসে দুটি রেঞ্জের আওতায় বনের জমিতে প্রায় কয়েক হাজার বাড়ীঘর, দোকান ও মার্কেট নির্মান করে জবরদখলকারীরা। তার মধ্যে চন্দ্রা, মৌচাক, কাঁচিঘাটা বিটে সবচেয়ে বেশী বনের জমি জবরদখল করা হয়। কয়েক মাস পর দুটি রেঞ্জের বিট অফিস গুলো সক্রিয় হয়ে প্রথমে মাটি কাটা রেল-লাইন ও পরে সিনাবহ বাজারে বড় ধরনের দুটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চালিয়ে সিনাবহ বাজার উচ্ছেদ করে অনেকটা তোপের মুখে পড়তে হয় চন্দ্রা রেঞ্জ অফিসকে। অভিযানের পরও থেমে নেই বনের জমি জবরদখল। এলাকার সচেতন মহল এর কারন হিসেবে বর্তমানে চন্দ্রা রেঞ্জ ও বিট অফিসের কর্মকর্তাদেরকেই দায়ী করছেন। এদের কারনে প্রতিনিয়ত জবরদখল হচ্ছে বনবিভাগের জমি। তারা মনে করেন বিট অফিসের কতিপয় অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজসে টাকার বিনিময়ে বনের জমি দখল করে নির্মান করা হচ্ছে পাকা বাড়ীঘরসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।
অভিযানের ভয় দেখিয়ে জবরদখলকারীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
বনবিভাগের এ দুটি রেঞ্জের প্রতিটি বিট অফিসে রয়েছে নানা অনিয়ম ও অরাজকতা। বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে বিট অফিস গুলো পরিচালিত হলেও দেখার যেন কেউ নেই। কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিটের আওতায় সম্প্রতি বিশ^াসপাড়া, খাজারডেক, রংপুরের টেক, বাড়ইপাড়া এলাকায় বনের জমি দখল করে আধাপাকা বাড়ীর কাজ চলমান রয়েছে।
অপরদিকে পশ্চিম চান্দরা কারিকর পাড়া এলাকায় ইসমাইল নামে এক দালাললের মাধ্যমে বনের জমিসহ ডিমারগেশন ছাড়াই হাসেম আলী নামক এক লোক পাকাবাড়ী করিতেছে। পশ্চিম চান্দরা কারিকরপাড়া এলাকার বনের কথিত বনের ওই দালাল ইসমাইলকে মোটা অংকের টাকা দিলেই বনের জমিতে করা যাচ্ছে ঘর। গত কয়েক মাসে দালাল ইসমাইলসহ আব্দুল মান্নান, বিল্লাল, নুরমোহাম্মদ, প্রবাসী আফাজ উদ্দিন, শরিপন নেছা, আলমাছ, আনোয়ারসহ অনেকে বনের জমি দখল করে পাকা বাড়ী নির্মান করেছে। অপরদিকে বনের দালাল ইসমাইলের নামে একাধিক বন মামলা থাকার কারনে সে প্রকাশ্যেই ঘোষনা দিয়ে বনের জমিতে ঘর করে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে। ইসমাইলকে টাকা না দিলে ওই এলাকায় বনের জমির উপর দিয়ে নাকি মানুষ হাটতেও পাড়ে না। কারন বিট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও কাঁচিঘাটা এ দুটি রেঞ্জের আওতায় ১০টি বিট অফিস ও দুটি সাব-বিট অফিস ও একটি ফরেষ্ট চেক-ষ্টেশন রয়েছে। এ দুটি রেঞ্জের আওতায় প্রায় ২১ হাজার একরের বেশী বন রয়েছে। বিট অফিস গুলো হচ্ছে মৌচাক, চন্দ্রা, বাড়ইপাড়া, বোয়ালী, কাশিমপুর, খলিশাজানি, কাচিঘাটা, জাথালিয়া, রঘুনাথপুর ও সাভার বিট। এ ছাড়াও ভান্নারা ও গোবিন্দ পুর এলাকায় দুটি সাব-বিট অফিস এবং চন্দ্রা খাড়াজোড়া এলাকায় একটি ফরেষ্ট চেকপোষ্ট রয়েছে।
বিভিন্ন বিট এলাকা ঘোরে দেখা যায়, চন্দ্রা ও মৌচাক বিটে সবচেয়ে বেশী বনবিভাগের জমি বেশী জবরদখল হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে।
কালিয়াকৈর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম শাকিল জানান, পশ্চিম চান্দরা কারিকর পাড়া বনের জমি জবর দখল করে বাড়ী নির্মানের বিষটি আমার জানা নেই। তবে আমি নিজে গিয়ে খোজ নিয়ে এর সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।