গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক বিএনপি নেতার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদার টাকা না পেয়ে দুই তেল ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ওই ব্যবসায়ীদের টাকা লুট ও সরিষা তেলের ড্রাম ফেলে দেওয়ার অভিযোগও উঠে। গত শনিবার দুপুরে উপজেলার জামালপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই ব্যবসায়ীরা হলেন, গাজীপুর মহানগরীর সালনা এলাকার আবুল বাশার ও সজীব মিয়া। তারা দুজনেই তেল ব্যবসায়ী।
এলাকাবাসী ও ওই তেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, আবুল বাশার ও সজীব মিয়া গত ৪-৫ বছর ধরে কালিয়াকৈর উপজেলার জামালপুর বাজারের পাশে মিজানুর রহমানের মার্কেটের সামনে ফুটপাতে বসে সরিষার তেল বিক্রি করে আসছেন। বিগত দিনে তারা ওই মার্কেটের সামনে তেল বিক্রি করায় সময় কখনো কাউকে চাঁদা দিতে হয়নি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে জামালপুর বাজারের ইজারা নেন মধ্যপাড়া ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। তার সঙ্গে খাজনা ওঠানোর দায়িত্ব পালন করে মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন দেওয়ান ওরফে লুবান। গত ৩ মে শনিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন তার দুই সহযোগি সুজন ও শহিদুল ইসলাম ওই তেল ব্যবসায়ীদের কাছে যান। তাদের কাছে গিয়ে ৪০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন বিএনপির ওই নেতা ও তার সহযোগীরা। সেদিন চাঁদা না দেওয়ায় তারা ওই ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে চলে যান। কিন্তু এক সপ্তাহ পর গত শনিবার ১০ মে সুজন ও শহিদুল তাদের কাছে আবারো ৪০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করেন ওই ব্যবসায়ীরা। পরে তারা ওই ব্যবসায়ী আবুল বাশার ও সজিব মিয়াকে এলোপাথারী মারধর করে তাদের জামাকাপড় ছিড়ে ফেলে হামলাকারীরা। এসময় হামলাকারীরা তাদের সাথে থাকা সারা দিনের তেল বিক্রির ১৫-১৬ হাজার নগদ টাকা লুট করে নেয়। এতে বাধা দেওয়ায় তাদের দোকানে থাকা ৭০ লিটার সরিষার তেল রাস্তায় ফেলে দেয় হামলাকারীরা। ওই ঘটনার ভিডিও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যে সেটা ভাইরাল হয়ে যায়।
হামলার শিকার তেল ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, প্রতি শনিবার জামালপুর বাজারে তেল বিক্রি করি। সেখানে তেল বিক্রি করার জন্য স্থানীয় দুই যুবক ৪০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় আমাকে টানাহেঁচড়া করে আমার জামা ছিরে ফেলেছে। এসময় তারা তেল বিক্রির ১৫-১৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এছাড়াও তারা ৭০ লিটার সরিষার তেল ফেলে দিয়েছে। যার মূল্য ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
জানতে চাইলে মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বাজার ইজারাদারের অংশীদার জাকির হোসেন দেওয়ান জানান, বাজার ইজারা আমার নামে নয়। তবে আমি ইজারাদারের অংশীদার হিসাবে আছি। ওই ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই ব্যবসায়ী নিজেই আওয়ামী লীগের লোকের সঙ্গে মিলে ঘটনার সৃষ্টি করেছে। তবে তাদের কাছে কেউ চাঁদা দাবি করেনি।
এ বিষয়ে জানতে জামালপুর বাজার ইজারাদার ও মধ্যপাড়া ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
এব্যাপারে মধ্যপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লেহাজ উদ্দিন জানান, ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা চাওয়া উচিত হয়নি। এরকম কাজের জন্যই বিএনপির বদমান হচ্ছে।
কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আব্দুল সেলিম জানান, একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেটি দেখার পর ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।