Dhaka ০৬:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাসনে ডাকঘর এখন স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয়

 

 

গাজীপুর মহানগরের নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিত্যক্ত ভবনে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে। ভবনটি একসময় সদর উপজেলার বাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয় ছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে ভবনটি পড়ে ছিল। সম্প্রতি ভবনটি রং ও সংস্কার করে একটি ঘরে যুবদল ও চারটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা দখল করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাবেক গাজীপুর, টঙ্গী পৌরসভাসহ ছয়টি ইউপি নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। ইউপি কার্যালয়গুলোর জমি ও ভবন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করলেও সাবেক বাসন ইউপির ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া করা ভবনে আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়। এরপর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পাশে একটি নতুন ভবনে চান্দনা ডাকঘর-১৭০২-এর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভবনটি দখল করে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয় ও আরেকটি কক্ষে শাটার লাগিয়ে থানা যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে।সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের পূর্ব পাশে একটি ভবনের চারটি কক্ষ আছে। আগে পরিত্যক্ত থাকলেও ভবনটি নতুন করে রং ও সংস্কার করা হয়েছে। সামনের নিচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটিতে বড় করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম। সামনে বেশ কিছু ব্যানার-পোস্টার পড়ে আছে। মূল ভবনের বাইরে পূর্ব পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডান পাশে (পশ্চিম দিকে) একটি কক্ষে নতুন শাটার লাগানো। সেখানে লেখা আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়।

ওই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একসময় এটি বাসন ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ছিল। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। আমরা সিএনজি স্ট্যান্ড করেছিলাম। পরে সিটি করপোরেশনের লোকজন আমাদের উঠিয়ে দেয়। এখন সেখানে বিএনপির লোকজন অফিস করেছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, ‘এখন তাদেরই তো ক্ষমতা। তারা যা খুশি তাই করতেছে। সরকারি জমি, ভবন দখল করছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন তাদের কিছুই বলছে না।’জানতে চাইলে বাসন থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো অফিস বা জমি দখল করিনি। ওইখানে এক ব্যক্তি দোকানঘর লিজ নিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন ছিল সেটি নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।’

বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনসুর আহমেদ জানান, কে বা কারা সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড দিয়েছে তাঁর জানা নেই। আজকে অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কমিটির নামে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নামে কারা সাইনবোর্ড দিয়েছে আমার জানা নেই।’যোগাযোগ করলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের জমি বা ভবন দখল করে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয় করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শেরপুরে জমি বেদখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

বাসনে ডাকঘর এখন স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয়

Update Time : ০৭:০০:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

 

 

গাজীপুর মহানগরের নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিত্যক্ত ভবনে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে। ভবনটি একসময় সদর উপজেলার বাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয় ছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে ভবনটি পড়ে ছিল। সম্প্রতি ভবনটি রং ও সংস্কার করে একটি ঘরে যুবদল ও চারটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা দখল করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাবেক গাজীপুর, টঙ্গী পৌরসভাসহ ছয়টি ইউপি নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। ইউপি কার্যালয়গুলোর জমি ও ভবন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করলেও সাবেক বাসন ইউপির ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া করা ভবনে আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়। এরপর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পাশে একটি নতুন ভবনে চান্দনা ডাকঘর-১৭০২-এর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভবনটি দখল করে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয় ও আরেকটি কক্ষে শাটার লাগিয়ে থানা যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে।সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের পূর্ব পাশে একটি ভবনের চারটি কক্ষ আছে। আগে পরিত্যক্ত থাকলেও ভবনটি নতুন করে রং ও সংস্কার করা হয়েছে। সামনের নিচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটিতে বড় করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম। সামনে বেশ কিছু ব্যানার-পোস্টার পড়ে আছে। মূল ভবনের বাইরে পূর্ব পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডান পাশে (পশ্চিম দিকে) একটি কক্ষে নতুন শাটার লাগানো। সেখানে লেখা আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়।

ওই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একসময় এটি বাসন ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ছিল। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। আমরা সিএনজি স্ট্যান্ড করেছিলাম। পরে সিটি করপোরেশনের লোকজন আমাদের উঠিয়ে দেয়। এখন সেখানে বিএনপির লোকজন অফিস করেছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, ‘এখন তাদেরই তো ক্ষমতা। তারা যা খুশি তাই করতেছে। সরকারি জমি, ভবন দখল করছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন তাদের কিছুই বলছে না।’জানতে চাইলে বাসন থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো অফিস বা জমি দখল করিনি। ওইখানে এক ব্যক্তি দোকানঘর লিজ নিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন ছিল সেটি নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।’

বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনসুর আহমেদ জানান, কে বা কারা সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড দিয়েছে তাঁর জানা নেই। আজকে অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কমিটির নামে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নামে কারা সাইনবোর্ড দিয়েছে আমার জানা নেই।’যোগাযোগ করলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের জমি বা ভবন দখল করে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয় করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।