Dhaka ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দালালদের নিয়ন্ত্রণে বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিস

 

 

প্রতি বছর ভূমি সপ্তাহে শুদ্ধাচারে নীতিবাক্য শোনা গেলেও চিহ্নিত দালাল-ওমেদারদের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে গাজীপুর সদর সার্কেলের বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এসব অপকর্মে সরাসরি জড়িত অফিসের কর্মকর্তা (নায়েব) মাহ্ আলম ও সহযোগীরা হলেন অফিস সহকারী মাকসুদা ও জাফর। তাদের কারণে সেবা প্রার্থীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। সাধারণ সেবাপ্রার্থীর চেয়ে দালাল চক্রের তৎপরতা ও উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দালালদের খপ্পর থেকে রেহাই পাচ্ছেনা প্রান্তিক ভূমি সেবা প্রার্থীসহ কেউই। মাহ্ আলম আসার পর থেকেই বেড়ে যায় দালাল চক্রের দালালী। এই দালালচক্রের নেতা হলো ইব্রাহিম। সে মহানগরীর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার বাসিন্দা।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাহ্ আলম ইতোপূর্বে সালনা ভূমি অফিসের নায়েব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই শুরু হয় দালাল নেতা ইব্রাহিমের দালালী। মাহ্ আলম বাসন ভূমি অফিসে যোগদানের পর থেকেই ইব্রাহিম উক্ত ভূমি অফিসে দাপটের সাথে দালালের নেতা হিসেবে কাজ তরে যাচ্ছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন ভূমি সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলার শুরুতেই তারা জানায়, ভূমি অফিসে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। খতিয়ান, নামজারী, দিয়ারা সংশোধনী ও ভূমি সংক্রান্ত মামলাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিকট যেতে চাইলে বাঁধা প্রদান করেন দালালরা। কেহ যদি নিজ যোগ্যতায় যেতে চায়, তাহলে তার ফাইল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাতিল বা সময় ক্ষ্যাপন করা হয়। নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই দালালদের মাধ্যমে কাজ গুলো দ্রুত সম্পাদনের জন্য গ্রাহকগণ ছুটে বেড়ান দালালদের নিকট। কারণ দালালদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক। আবার অনেক সময় দালালরাও টাকা নিয়ে প্রতারনা করে থাকেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ করে দিবে বলে একটি নামজারি সম্পাদন করতে ৭/৮ মাস ঘুরানোর পর বিভিন্ন দফতরে টাকা খরচ হয়েছে বলে টাকা ফেরত দেয়না। অনেক সময় কেউ জোর করে কিছু টাকা আদায় করতে পারলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে ফাইল আটকিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভয়ে কাউকে নালিশও করেন না। সেবা প্রার্থীরা এদের কাছে একেবারেই জিম্মি।

 

বক্তব্যের সত্যতা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, ভূমি অফিস বা সরকারী কোনো দপ্তরের কর্মচারী না হলেও এই ভূমি অফিসে প্রতিনিয়তই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকজন চিহ্নিত দালাল। তাদের পিছে পিছে ছুটছে কয়েকজন অসহায় ভূমি সেবা প্রার্থী নারী-পুরুষ। বিকেলের পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে বসে দালালদের ফাইল ঘাটাঘাটি করতে দেখা যায়। প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এরা ভূমি অফিসের কর্মচারী। এদের আচরণ দেখে বুঝা যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এদের সম্পর্ক কতটা গভীর। অনুসন্ধানে এরকম চিহ্নিত অন্তত কয়েকজন সক্রিয় দালালের নাম উঠে এসেছে ‘দৈনিক ঘোষণা’র হাতে। এক পর্যায়ে ভিডিও ধারণ করার সময় প্রতিবেদকের মোবাইল সেট দালাল চক্রের নেতা ইব্রাহিম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি হুমকী প্রদান করে বলেন, “আমি বিএনপি রাজনীতি করি আমাকে জানতে হবে কেন আপনি ভুমি অফিসে এসে ভিডিও করেন”। এঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

 

এবিষয়ে জানতে বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মাহ্ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইব্রাহীম তাহার অফিসে কাজ করে না। যদি পাশের রুমে দালালীর কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এবিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও এলএ) মোহাম্মদ কায়সার খসরু জানান, এঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা lগ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শেরপুরে জমি বেদখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দালালদের নিয়ন্ত্রণে বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিস

Update Time : ০৬:৫৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

 

 

প্রতি বছর ভূমি সপ্তাহে শুদ্ধাচারে নীতিবাক্য শোনা গেলেও চিহ্নিত দালাল-ওমেদারদের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে গাজীপুর সদর সার্কেলের বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এসব অপকর্মে সরাসরি জড়িত অফিসের কর্মকর্তা (নায়েব) মাহ্ আলম ও সহযোগীরা হলেন অফিস সহকারী মাকসুদা ও জাফর। তাদের কারণে সেবা প্রার্থীদের দূর্ভোগের শেষ নেই। সাধারণ সেবাপ্রার্থীর চেয়ে দালাল চক্রের তৎপরতা ও উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দালালদের খপ্পর থেকে রেহাই পাচ্ছেনা প্রান্তিক ভূমি সেবা প্রার্থীসহ কেউই। মাহ্ আলম আসার পর থেকেই বেড়ে যায় দালাল চক্রের দালালী। এই দালালচক্রের নেতা হলো ইব্রাহিম। সে মহানগরীর সদর থানার দক্ষিণ সালনা এলাকার বাসিন্দা।

 

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মাহ্ আলম ইতোপূর্বে সালনা ভূমি অফিসের নায়েব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই শুরু হয় দালাল নেতা ইব্রাহিমের দালালী। মাহ্ আলম বাসন ভূমি অফিসে যোগদানের পর থেকেই ইব্রাহিম উক্ত ভূমি অফিসে দাপটের সাথে দালালের নেতা হিসেবে কাজ তরে যাচ্ছেন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন ভূমি সেবা প্রার্থীদের সাথে কথা বলার শুরুতেই তারা জানায়, ভূমি অফিসে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। খতিয়ান, নামজারী, দিয়ারা সংশোধনী ও ভূমি সংক্রান্ত মামলাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিকট যেতে চাইলে বাঁধা প্রদান করেন দালালরা। কেহ যদি নিজ যোগ্যতায় যেতে চায়, তাহলে তার ফাইল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাতিল বা সময় ক্ষ্যাপন করা হয়। নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই দালালদের মাধ্যমে কাজ গুলো দ্রুত সম্পাদনের জন্য গ্রাহকগণ ছুটে বেড়ান দালালদের নিকট। কারণ দালালদের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক। আবার অনেক সময় দালালরাও টাকা নিয়ে প্রতারনা করে থাকেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ করে দিবে বলে একটি নামজারি সম্পাদন করতে ৭/৮ মাস ঘুরানোর পর বিভিন্ন দফতরে টাকা খরচ হয়েছে বলে টাকা ফেরত দেয়না। অনেক সময় কেউ জোর করে কিছু টাকা আদায় করতে পারলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে ফাইল আটকিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভয়ে কাউকে নালিশও করেন না। সেবা প্রার্থীরা এদের কাছে একেবারেই জিম্মি।

 

বক্তব্যের সত্যতা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে, ভূমি অফিস বা সরকারী কোনো দপ্তরের কর্মচারী না হলেও এই ভূমি অফিসে প্রতিনিয়তই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকজন চিহ্নিত দালাল। তাদের পিছে পিছে ছুটছে কয়েকজন অসহায় ভূমি সেবা প্রার্থী নারী-পুরুষ। বিকেলের পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে বসে দালালদের ফাইল ঘাটাঘাটি করতে দেখা যায়। প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে এরা ভূমি অফিসের কর্মচারী। এদের আচরণ দেখে বুঝা যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এদের সম্পর্ক কতটা গভীর। অনুসন্ধানে এরকম চিহ্নিত অন্তত কয়েকজন সক্রিয় দালালের নাম উঠে এসেছে ‘দৈনিক ঘোষণা’র হাতে। এক পর্যায়ে ভিডিও ধারণ করার সময় প্রতিবেদকের মোবাইল সেট দালাল চক্রের নেতা ইব্রাহিম ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি হুমকী প্রদান করে বলেন, “আমি বিএনপি রাজনীতি করি আমাকে জানতে হবে কেন আপনি ভুমি অফিসে এসে ভিডিও করেন”। এঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

 

এবিষয়ে জানতে বাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ মাহ্ আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ইব্রাহীম তাহার অফিসে কাজ করে না। যদি পাশের রুমে দালালীর কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এবিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও এলএ) মোহাম্মদ কায়সার খসরু জানান, এঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা lগ্রহণ করা হবে।