Dhaka ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে এসডিএফ’র ঋণ কেলেঙ্কারি, উত্তাল গ্রাম!

 

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)-এর ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। দরিদ্র মানুষের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নলকুড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মানিককুড়া গ্রাম।

 

অভিযোগ রয়েছে, ১৭০ সদস্যের মধ্যে ১৩১ জনের নামে দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮শ ৮০ টাকার ঋণ। কিন্তু বাস্তবে অন্তত ৭০-৮০ জন কোনো টাকা নেননি। অথচ তাদের নামে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন ভিক্ষুক, দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষ।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এসডিএফ’র উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন, সমিতির সভাপতি মমিনা বেগম, সম্পাদক আঞ্জুয়ারা ও কোষাধ্যক্ষ মিনারা বেগম।

 

রুবিয়া বেগম, খোদেজা বেগম, সুফিয়া বেগম, রাশেদা বেগম, অজুফা বেগম, ছাবিনা ইয়াছমিন, আবেদা খাতুন, আবিরন বেগম, ছফুরা বেগম, সুখি আক্তারসহ অন্তত ৭০-৮০ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, তাদের নামে ঋণ দেখানো হলেও কোনো অর্থ তারা নেয়নি।

 

ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলে না। অথচ আমাদের নামে নাকি অনেক টাকা ঋণ উঠেছে! অথচ আমি এক টাকাও পাইনি। এখন যদি এই টাকার দায় আমার ঘাড়ে চাপানো হয়, তবে আমি কোথায় যাব?”

 

অন্য এক ভুক্তভোগী আবিরন বেগম বলেন, “আমাদের নাম ব্যবহার করে টাকা তুলে খেয়ে ফেলেছে ওরা। আমরা তো কিছুই জানতাম না। এখন যদি সমিতি কিস্তি চাই, আমরা কী দিয়ে শোধ করব?

আমরা এর দায় থেকে মুক্তি চাই।”

 

এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সমিতির সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পালিয়ে সটকে পড়েন। একারণে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন বলেন, “বিষয়টি সত্য। ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

 

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন বলেন, “আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না।”

 

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। দরিদ্র মানুষের নামে ঋণ দেখিয়ে কেউ যদি টাকা আত্মসাৎ করে থাকে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

 

এদিকে প্রায় ১০ লাখ টাকার এ ঋণ কেলেঙ্কারি ঘিরে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 

গ্রামবাসী বলছেন, “এভাবে দরিদ্র মানুষের নামে ঋণ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক। না হলে গ্রামবাসী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শেরপুরে জমি বেদখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে এসডিএফ’র ঋণ কেলেঙ্কারি, উত্তাল গ্রাম!

Update Time : ০৪:১০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

 

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)-এর ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। দরিদ্র মানুষের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার জালিয়াতির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নলকুড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মানিককুড়া গ্রাম।

 

অভিযোগ রয়েছে, ১৭০ সদস্যের মধ্যে ১৩১ জনের নামে দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮শ ৮০ টাকার ঋণ। কিন্তু বাস্তবে অন্তত ৭০-৮০ জন কোনো টাকা নেননি। অথচ তাদের নামে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন ভিক্ষুক, দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষ।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এসডিএফ’র উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন, সমিতির সভাপতি মমিনা বেগম, সম্পাদক আঞ্জুয়ারা ও কোষাধ্যক্ষ মিনারা বেগম।

 

রুবিয়া বেগম, খোদেজা বেগম, সুফিয়া বেগম, রাশেদা বেগম, অজুফা বেগম, ছাবিনা ইয়াছমিন, আবেদা খাতুন, আবিরন বেগম, ছফুরা বেগম, সুখি আক্তারসহ অন্তত ৭০-৮০ জন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, তাদের নামে ঋণ দেখানো হলেও কোনো অর্থ তারা নেয়নি।

 

ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলে না। অথচ আমাদের নামে নাকি অনেক টাকা ঋণ উঠেছে! অথচ আমি এক টাকাও পাইনি। এখন যদি এই টাকার দায় আমার ঘাড়ে চাপানো হয়, তবে আমি কোথায় যাব?”

 

অন্য এক ভুক্তভোগী আবিরন বেগম বলেন, “আমাদের নাম ব্যবহার করে টাকা তুলে খেয়ে ফেলেছে ওরা। আমরা তো কিছুই জানতাম না। এখন যদি সমিতি কিস্তি চাই, আমরা কী দিয়ে শোধ করব?

আমরা এর দায় থেকে মুক্তি চাই।”

 

এদিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সমিতির সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পালিয়ে সটকে পড়েন। একারণে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন বলেন, “বিষয়টি সত্য। ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

 

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা ক্লাস্টার অফিসার হারাধন মহন বলেন, “আমি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাবে না।”

 

এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। দরিদ্র মানুষের নামে ঋণ দেখিয়ে কেউ যদি টাকা আত্মসাৎ করে থাকে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

 

এদিকে প্রায় ১০ লাখ টাকার এ ঋণ কেলেঙ্কারি ঘিরে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 

গ্রামবাসী বলছেন, “এভাবে দরিদ্র মানুষের নামে ঋণ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক। না হলে গ্রামবাসী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।”