Dhaka ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হেলাল মুন্সী বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল হলেও বাহিনীর অনুপ্রেরণা ও সফল বাবা

হেলাল মুন্সি—বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাধারণ কনস্টেবল। কর্মস্থল সিআইডি মালিবাগ হেডকোয়ার্টার্স। ত্রিশ বছরের চাকরি জীবনে দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করলেও, বুকের গভীরে লালন করেছেন এক অপূর্ণ স্বপ্ন—বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু আঠারো বছর বয়সেই সংসারের অভাব-অনটন তাকে সেই স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুলিশে যোগ দিতে হয়েছিল।

তবুও স্বপ্নের প্রদীপ নিভে যায়নি। তিনি সেটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন নিজের সন্তানের চোখে।

হেলালের ছেলে উবায়দা এক অসাধারণ প্রতিভা। ফরিদপুর জেলার এসএসসিতে প্রথম হয়েছিল। পরে নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করে একের পর এক অর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি—বাংলাদেশের প্রায় সব শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে সে গাজীপুর আইআইটিতে অধ্যয়ন করছে।

অডিটরিয়ামে দাঁড়িয়ে হেলাল যখন ছেলের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছিলেন, তার কণ্ঠে ছিল গর্ব, চোখে ছিল উজ্জ্বল স্বপ্ন। তিনি বললেন—

“আমি কনস্টেবল হয়েছি অভাবের কারণে, কিন্তু আমার ছেলে যেন কোনো সীমাবদ্ধতার কাছে হার না মানে। আল্লাহর রহমতে সে ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত সবসময় প্রথম হয়েছে। আজ সে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করছে।”

পুরো হলঘর ছিল নিস্তব্ধ। এত সিনিয়র অফিসারদের ভিড়েও একজন কনস্টেবলের অকপট কথায় সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারো চোখে জল, কারো মনে অনুপ্রেরণা।

এটি কোনো হতাশার কান্না নয়—এটি সংগ্রামের জয়গান, আত্মবিশ্বাসের অশ্রু। একজন সাধারণ বাবার অটল বিশ্বাস প্রমাণ করেছে—স্বপ্ন কখনো থেমে থাকে না, যদি পরিবারে থাকে ভালোবাসা, ত্যাগ আর অধ্যবসায়।

হেলাল মুন্সির গল্প আজ হাজারো অভিভাবকের প্রেরণা। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন—দারিদ্র্য কোনো বাঁধা নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষের প্রকৃত শক্তি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শেরপুরে জমি বেদখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

হেলাল মুন্সী বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল হলেও বাহিনীর অনুপ্রেরণা ও সফল বাবা

Update Time : ০৩:৫৪:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

হেলাল মুন্সি—বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাধারণ কনস্টেবল। কর্মস্থল সিআইডি মালিবাগ হেডকোয়ার্টার্স। ত্রিশ বছরের চাকরি জীবনে দেশের জন্য দায়িত্ব পালন করলেও, বুকের গভীরে লালন করেছেন এক অপূর্ণ স্বপ্ন—বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। কিন্তু আঠারো বছর বয়সেই সংসারের অভাব-অনটন তাকে সেই স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুলিশে যোগ দিতে হয়েছিল।

তবুও স্বপ্নের প্রদীপ নিভে যায়নি। তিনি সেটি জ্বালিয়ে দিয়েছেন নিজের সন্তানের চোখে।

হেলালের ছেলে উবায়দা এক অসাধারণ প্রতিভা। ফরিদপুর জেলার এসএসসিতে প্রথম হয়েছিল। পরে নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করে একের পর এক অর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি—বাংলাদেশের প্রায় সব শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে সে গাজীপুর আইআইটিতে অধ্যয়ন করছে।

অডিটরিয়ামে দাঁড়িয়ে হেলাল যখন ছেলের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছিলেন, তার কণ্ঠে ছিল গর্ব, চোখে ছিল উজ্জ্বল স্বপ্ন। তিনি বললেন—

“আমি কনস্টেবল হয়েছি অভাবের কারণে, কিন্তু আমার ছেলে যেন কোনো সীমাবদ্ধতার কাছে হার না মানে। আল্লাহর রহমতে সে ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে এসএসসি পর্যন্ত সবসময় প্রথম হয়েছে। আজ সে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করছে।”

পুরো হলঘর ছিল নিস্তব্ধ। এত সিনিয়র অফিসারদের ভিড়েও একজন কনস্টেবলের অকপট কথায় সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারো চোখে জল, কারো মনে অনুপ্রেরণা।

এটি কোনো হতাশার কান্না নয়—এটি সংগ্রামের জয়গান, আত্মবিশ্বাসের অশ্রু। একজন সাধারণ বাবার অটল বিশ্বাস প্রমাণ করেছে—স্বপ্ন কখনো থেমে থাকে না, যদি পরিবারে থাকে ভালোবাসা, ত্যাগ আর অধ্যবসায়।

হেলাল মুন্সির গল্প আজ হাজারো অভিভাবকের প্রেরণা। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন—দারিদ্র্য কোনো বাঁধা নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষের প্রকৃত শক্তি।