Dhaka ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বপ্নের তিস্তা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জুলাইয়ের শেষে

 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর উপর দিয়ে চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় তিস্তা গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জুলাইয়ের শেষে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এ সেতুটির উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে নবনির্মিত এ সেতুটির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান।

সেতু পরিদর্শনে তার সফরসঙ্গী ছিলেন- এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব সামছুল ইসলাম, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আবুল হোসেন ও সচিবের একান্ত সচিব আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

পরিদর্শনকালে সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী চীনের সেতু নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে সেতুটির উভয় পাশে দেখেন এবং সেতুর কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন।

সেতু পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সেতুটির মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু একটি আর্জ ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক পাকাকরণ কাজ বাকি রয়েছে। শিগগিরই বাকি কাজ শেষ করে এ মাসের (জুলাই) শেষের দিকে সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

সেতু পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রকৌশলী গৌতম প্রসাদ চৌধুরী, সেতুটির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল মালেক, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন, এলজিইডির গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে প্রায় ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেতুটিতে ২৯০টি পাইল ও ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিমি সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ীভাবে নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ১৩৩ একর জমি।

দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই সেতুটি নির্মিত হওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চল তথা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে রাজধানী শহরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি কমবে এবং এলাকার কৃষিপণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এখন সেতুটির উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সেতুটির উদ্বোধন হলে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

উল্লেখ্য, তিস্তা পাড়ের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে তিস্তা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে সেতুটি চলতি বছরের ২৪ জুন উদ্বোধনের কথা থাকলেও কিছু অসমাপ্ত কাজের কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শেরপুরে জমি বেদখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

স্বপ্নের তিস্তা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জুলাইয়ের শেষে

Update Time : ০১:৪৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর উপর দিয়ে চিলমারী উপজেলা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় তিস্তা গার্ডার সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জুলাইয়ের শেষে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এ সেতুটির উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে নবনির্মিত এ সেতুটির প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান।

সেতু পরিদর্শনে তার সফরসঙ্গী ছিলেন- এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব সামছুল ইসলাম, উপদেষ্টার একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আবুল হোসেন ও সচিবের একান্ত সচিব আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

পরিদর্শনকালে সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী চীনের সেতু নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে সেতুটির উভয় পাশে দেখেন এবং সেতুর কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন।

সেতু পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সেতুটির মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু একটি আর্জ ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক পাকাকরণ কাজ বাকি রয়েছে। শিগগিরই বাকি কাজ শেষ করে এ মাসের (জুলাই) শেষের দিকে সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

সেতু পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রকৌশলী গৌতম প্রসাদ চৌধুরী, সেতুটির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল মালেক, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন, এলজিইডির গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণে প্রায় ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেতুটিতে ২৯০টি পাইল ও ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিমি সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ীভাবে নদী শাসনের কাজ করা হয়েছে। এছাড়া অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ১৩৩ একর জমি।

দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই সেতুটি নির্মিত হওয়ার ফলে উত্তরাঞ্চল তথা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে রাজধানী শহরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিমি কমবে এবং এলাকার কৃষিপণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এখন সেতুটির উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সেতুটির উদ্বোধন হলে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

উল্লেখ্য, তিস্তা পাড়ের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও দাবির প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে তিস্তা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হলে সেতুটি চলতি বছরের ২৪ জুন উদ্বোধনের কথা থাকলেও কিছু অসমাপ্ত কাজের কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।