মাদকাসক্ত একটি মানসিক রোগ। সুলভের সহজে হাতের কাছে পাওয়া, আশে পাশের পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব, হতাশা, ব্যর্থতা এই বিষয়গুলোর কারণেই যে কেউ মাদকাসক্ত বা নেশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।এর ক্ষতিকারক দিকগুলি অত্যন্ত ভয়াবহ। মাদকের কারণে মস্তিষ্ক ও শ্বাস যন্ত্রের ক্ষমতা শরীরের সূক্ষ্ম অনুভূতি কমিয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়। স্বাভাবিক খাদ্যঅভ্যাস নষ্ট করে। যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ইসলামী মতে মাদক ও নেশা সেবন হারাম পাশাপাশি তা অপবিত্র। মুসলমানদের জন্য যেমন মাদক সেবন হারাম তেমন সংরক্ষণ বহন ক্রয় বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মাদক ও নেশা যে জাতির মধ্যে বেশী ছড়িয়ে পড়ে সে জাতি বা রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বেশি সৃষ্টি হয়। নেশা বা মাদক সেবনে পারস্পরিক ক্রোধ ও শত্রুতার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশে মাদক ও নেশার প্রথম ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হয় জানা নেই তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ করে এর ব্যবহার পূর্বের তুলনায় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের যুবসমাজ কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও বর্তমানে ভয়াবহ আকারে বিভিন্ন কৌশলে জড়িয়ে পড়ছে নেশায়। ক্রমেই এর ভয়াবহতায় অশান্ত হচ্ছে আমাদের চারপাশ। রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাট বাজার, বাস স্ট্যান্ড, ঝোপঝাড়, পরিত্যক্ত কোন ভবন কোথাও যেন বাদ নেই যেখানে মাদক সেবী পাওয়া যায় না। উঠতি বয়সি ছেলে মেয়েরা শখের বসে বন্ধু বান্ধবের আড্ডায় পড়ে প্রথমে শুরু করে এসব মাদকের ব্যবহার। বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে জড়ায় এ নেশায়। আস্তে আস্তে এর ভয়াবহতার দিকে চলে যায়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে নেশায় আসক্ত ছেলে মেয়েদের দ্বারা। হতাশা ও নেশায় আসক্ত হয়ে বাবা মার সাথে বিতর্কে জড়িয়ে খুন করছে বাবা মাকে। এ ধরনের ভয়াবহ নেশায় আক্রান্ত হয়ে সমকামিতার মতো নোংরা কাজও করছে এ যুগের ছেলে মেয়েরা। এর ভয়াবহতা দিন দিন এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে যখন অসুস্থ নেশাখোর চেপে বসবে তখন প্রতিরোধ করার উপায় থাকবে না আমাদের।
দিন দিন সমাজটা কেমন যেন অশান্ত হয়ে উঠছে। মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা রাশ পাচ্ছে।
এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলেই দেখা যায় পাশে বসেই প্রকাশ্যে গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডি সেবন করছে। বাধা দিলে হয় বিপদ তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। পুরো দেশটাই যেন নেশাখোরদের কাছে জিম্মি। সরকার আসছে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু মাদক ও নেশার ব্যাপারে সবাই উদাসীন।
দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকলেও তারা অলস সময় পার করছে। প্রশাসন যে দুই চার জনকে ধরে আদালতে পাঠাচ্ছে তারাও কিছুদিন পরে জামিনে মুক্ত হয়ে আবার ভয়ংকর হয়ে উঠে।আসলে জানিনা দেশে প্রচলিত আইনে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা। দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও জড়িয়ে পড়ছে মাদকের মত ঘৃণ্য ব্যবসায় । দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই সমাজ ব্যবস্থায় এখন অস্থিরতা ও অশান্তি বিরাজ করছে। টাকার লোভে যুব সমাজ ও উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের ব্যবহার করছে সমাজের প্রভাবশালী মাদক কারবারি ব্যবসায়ীরা। দেশের সরকার প্রধানরা তাদের গদি টিকানোর জন্য এসব অবৈধ মাদক কারবারি ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে পারছেন না। এর দায় কার? বা লাগামই বা কে টানবে? দিন দিন অধঃপতনে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা ।
প্রতিনিয়ত পার্শ্ববর্তী দেশ গুলো থেকে দেদারসে ঢুকছে মাদক ও বিভিন্ন নেশার চালান। আমাদের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কি এসবের খেয়াল রাখেন?
আজ আমার সন্তান মাদকের থাবায় ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে কাল আপনার সন্তান ও এর ভয়াবহতা থেকে রেহাই পাবে না। সন্তান বড় হলে বাবা মায়ের শাসন মানতে চায় না। বেশির ভাগ সন্তানই বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে বন্ধুবান্ধবদের বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে তখনই নেশার মত ধ্বংসের হাতে পড়ে বিপন্ন করে ফেলে জীবন। হযে উঠে অপ্রতিরোধ্য। আপনার সন্তানকে যতই শিক্ষিত বানান না কেন একবার খারাপ হলে আর তাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তাই শুধু অভিভাবকই নয় সমাজ ও রাষ্ট্র এর জন্য দায়ী। তাই বলতে হয় শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই রাষ্ট্রে কিন্তু শিক্ষিত বিবেকের বড়ই অভাব।
সমাজের প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক অভিভাবকদের গোয়েন্দা নজরে রেখে নেশাও মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। যাতে মাদক কারবারিরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা আদায় করতে না পারে।
বাংলাদেশ একটি সীমিত আয়ের ছোট্ট রাষ্ট্র সেখানে মাদক ও নেশায় যে পরিমাণ অর্থ প্রতিদিন খরচ হয় যার সুবিধা আদায় করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলি। মাদক ও নেশা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হত। এতে উপকৃত হতো রাষ্ট্র আমরা পেতাম ভালো সমাজ ব্যবস্থা।
মাদক ও নেশাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামাজিকভাবে বয়কটের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে সমাজের প্রতিটা পরিবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।
প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন শোধন করে সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে মাদক কারবারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক। মনে রাখতে হবে মাদক ও নেশা শুধু আপনার আমারই ক্ষতি করবে না রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সৎ সাহসী যোগ্য অফিসারদের দিয়ে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়ে মাদকের প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব।
এতে করে অশান্ত নেশার ছোবল থেকে আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একদম মূল পয়েন্ট থেকে মাদককে চিরতরে বন্ধ করতে হবে তবেই বাঁচবো আমরা। বাঁচবে হাজারো পরিবার। বাঁচবে রাষ্ট্র।